• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

পাইকারী বাজারে বেগুন কেজি ২০ টাকা, খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা

  • ''
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০২৪

নীলফামারী প্রতিনিধি:

রমজান শুরুর আগ থেকেই কালো গোল বেগুন, সাদা গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, লেবু, শশা ও খিরার দাম নীলফামারীর বিভিন্ন বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। আর রমজানে ইফতার সামগ্রীর অন্যতম অনুষঙ্গ হলো বেগুনের চপ। কিছু কিছু অসাধু খুচরা ব্যবসায়ী বেগুনের বাজারকে অস্থির করে তুলছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোজাদারসহ সাধারণ ক্রেতারা।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে কেজিপ্রতি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। যা পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। এছাড়াও পাইকারী বাজারে শশা ও খিরা বিক্রি ২৫-৩০ টাকায়। ওই খিরা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়াও প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, প্রকারভেদে আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও হালিপ্রতি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। রমজানে বেগুনসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ক্রেতা সাধারন।

জেলা শহরের বেগুন, শশা, লেবু ও খিরা কিনতে আসা নিউবাবু পাড়ার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান, ‘১১ মাস ব্যবসা করে যা আয় করেন, রোজার মাসে তার দ্ধিগুন লাভ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা। রোজার আগে এসব বেগুন বিক্রি হয়েছিল প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। আর এখন সেই বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫০ টাকায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশে কোন আইন কানুন নাই। ব্যবসায়ীরা যা করে তাই হয়।’

ওই বাজারে আরেক ক্রেতা খতিবর রহমান বলেন, রোজা এলে স্বাভাবিকভাবে গোল বেগুনের একটু চাহিদা বাড়ে, আর তার সুবিধা নেয় খুচরা ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করার কেউ নেই।

একই এলাকায় ম্যাসে রান্না করে আলেয়া বেগম জানান, ‘বাজার করে এসে হিসাব দেওয়ার সময় ম্যাসের লোকজনের সাথে অবিশ্বাস তৈরী হয়। কারণ ওরা বিশ্বাস করতে চায় না বেগুন, টমেটো, লেবু ও খিরা বাজার এতো বেশী। ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরি করেন শফিকুল ইসলাম জানান, রমজানকে পুঁজি করে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসাীয়রা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়। এযেন মগের মুল্লুক দেখার কেউ নাই।’

মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কিচেন মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী গুলজার রহমান, নূর ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন পাইকারি বাজারকে দায়ি করছেন। তারা বলছেন, ‘আড়ত থেকে আমাদের এসব পণ্য বেশি দামে কিনতে হয়। তাই পাইকারী বাজারে বেশি দামে কেনার কারণে আমাদেরও খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে, খুচরা বাজারের বিক্রেতা নূর ইসলাম বলেন, কাঁচামাল পঁচনশীল ও আড়তদার ওজনে কম দেওয়াসহ লোকশান গুনতে হয়। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে আমদানী কম হওয়ায় পাইকারিতে হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে, এখানে আমরা কি করব।

নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক ও বেগুন বিক্রেতা আইয়ব আলী জানান, নিজের বেগুন ক্ষেত থেকে নিয়ে এসে কেজি বিক্রি করছি ১০-১৫ টাকায়। সেই বেগুন পাইকারী কিনে বিক্রি করছে ২০ টাকায়, আর খুচরা বাজারে দ্বিগুন দামে বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন,তিন হাত বদল হয়ে খুচরা ব্যবসায়ী বিক্রি করছেন ৫০ টাকা কেজি দরে। কৃষক মাথার ঘাম পয়ে ফেলে আবাদ করে লাভ কি?, এতে লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ারী।

কিচেন মার্কেটের আরেক খুচরা ব্যবসায়ী কাওসার আলী বলেন, আমরা পাইকারী বাজার থেকে আলু, বেগুন টমেটো, গাজর, খিরা, শশা ও লেবু কিনে আনি, সেখানকার দাম অনুযায়ী খুচরায় বিক্রি করে থাকি। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ালে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।

তিনি বলেন, রোজা মাসে গোল বেগুনটি হোটেল ও ফুটপাতের দোকানে চপ তৈরী হয়। রোজা আসলে এসব জিনিসের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই দামও বেড়ে যায়, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এছাড়াও, আড়তদাররা ওজনে কম দেয়, আবার একদিন বিক্রি না হলে পচে যায়। এছাড়া ও ঝড় বৃষ্টিতে মালামাল পাওয়া যায় না। তাই বিভিন্ন কারণে রোজার মাসে এসব কাঁচা মালের দাম উঠানামা করে।

জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম খাঁন জানান, কৃষক সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আবাদ করে। অথচ বাজারে এসে ঠকছে ব্যবসায়ীদের কাছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রোজার মাসে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের মাসিক মিটিং এ আলোচনা করে দ্রæত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads